ঢাকা ০১:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ ::
আমাদের নিউজপোর্টালে আপনাকে স্বাগতম...

১৭ রমজান: ঐতিহাসিক বদর দিবস আজ

আজ ১৭ রমজান। ইসলামের ইতিহাসে ১৭ রমজানের গুরুত্ব রয়েছে। ঐতিহাসিক বদর দিবস আজ। আজকের দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে হিজরির দ্বিতীয় সনের ১৭ রমজান মদিনা থেকে প্রায় ৭০ মাইল দূরে বদর প্রান্তরে সংঘটিত হয় মুসলমানদের এবং কুরাইশদের মধ্যে  এক ঐতিহাসিক যুদ্ধ যা ইতিহাসে বদরযুদ্ধ নামে পরিচিত। ইতিহাসে তা ‘গাজয়ানে’ বদর নামেও পরিচিত। বদরের যুদ্ধ ছিল কুরাইশ এবং মুসমানদের প্রথম সামরিক যুদ্ধ।  বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত প্রিয় নবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর নিয়ে আসা ধর্ম ইসলামের রক্ষায়  ইসলামের বিরুদ্ধবাদী বিশাল সৈন্য-সামন্তের মোকাবিলায় ইমানদার বান্দাদের ছোট একটি দল বদরের প্রান্তরে যুদ্ধ করেছিল।

এ যুদ্ধের ফলে ইসলামের ইতিহাসে যুগান্তকারী পরিবর্তন হয়। পবিত্র কুরআনে সূরা আনফালে আল্লাহ তায়ালা বলেন:” স্মরণ করো যখন আল্লাহ তোমাকে স্বপ্নে দেখিয়েছিলেন তারা সংখ্যায় ছিল অল্প। যদি তিনি  তাদের সংখ্যায় বেশি দেখাতেন তাহলে তোমরা সাহস হারাতে এবং যুদ্ধের জন্য নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি করতে। কিন্ত আল্লাহ রক্ষা করেছেন।নিশ্চয় তিনি অন্তরের খবর জানেন।”( সূরা আনফাল: ৪৩)

মুসলমানরা বিশ্বাস করেন, জয়-পরাজয় আল্লাহর হাতে। সম্মান ও অপমান আল্লাহর হাতে। তাই তারা সেদিন আবু জেহেলের বিশাল প্রশিক্ষিত এবং সুসজ্জিত বাহিনির সামনে নিরস্র অল্প সংখ্যক ইমানদার মুসলমান সৈন্য নিয়ে আল্লাহর নবি কাফেরদের মুখোমুখি হন।এ যুদ্ধে মানুষের ধারণাপ্রসূত সব ধরনের চিন্তা ও উপলব্ধির বাইরে গিয়ে আল্লাহ তায়ালা অস্ত্রশস্ত্রহীন ইমানদারের অতিক্ষুদ্র দলটিকে বিজয় দান করেন। এ বিশ্বাস ও চেতনা লালন করে পৃথিবীর যে প্রান্তে যখনই মুসলমানরা অসত্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, তারা সংখ্যায় বা উপকরণে কম হলেও আল্লাহ তাদের বিজয় দান করেছেন।

ইসলামের রক্ষায় অল্প সংখ্যক সম্পদ নিয়ে যারা এগিয়ে গিয়েছিল তাদের জয় নিশ্চিত হয়েছে। পক্ষান্তরে আল্লাহর উপর ভরসাহীন ভাবে অঢেল সম্পদ নিয়ে পরাজয়ের বর্ণনা ইতিহাসে ভরপুর হয়ে আছে।

রাসূলুল্লাহ সা: ৬২২ খ্রি: আল্লাহর নির্দেশে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। মদিনায় হিজরতের ফলে রাসূলুল্লাহ সা:, ইসলাম ও মুসলমানদের জীবনে এক নব অধ্যায়ের সূচনা হয়। মদিনাবাসী রাসূল্ল্লুাহ সা: ও ইসলামের সুমহান শান্তির বাণীকে সাদরে গ্রহণ করে। ইসলাম প্রচার ও প্রসার চার দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। মাত্র দ্ইু বছরে রাসূলুল্লাহ সা: কলহপ্রিয় মাদিনাবাসীদের একটি সভ্য জাতিতে পরিণত করতে সক্ষম হন। মদিনায় শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মদিনা সনদ প্রণয়ন করা হয়। এতে করে মদিনায় বসবাসরত পৌত্তলিক, ইহুদি, খ্রিষ্টানের মধ্যে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ও মদিনা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সুসংহত হয়। রাসূল্ল্লুাহ সা: মদিনায় আগমনের পর থেকে ইসলামের প্রচারও বাড়তে থাকে। ইসলামের অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতিতে কুরাইশরা ঈর্ষান্বিত ও নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় চিন্তিত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় মদিনা থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করতে ব্যস্ত হয়ে যায়।

ইসলামের ঘোর শক্র আবু সুফিয়ানের মিথ্যা প্রচার বদরের যুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন। আবু সুফিয়ানের মিথ্যা প্রচারণার ফলে আবু জাহেলের নেতৃত্বে ৭০০ উষ্ট্রারোহী, ১০০ অশ্বারোহী ও ২০০ পদাতিক সৈন্যসহ প্রায় ১০০০ সৈন্য নিয়ে মদিনার অভিমুখে যাত্রা করা হয়। এ সংবাদ শুনে শান্তপ্রিয় নবী সা: চিন্তিত হয়ে পড়লেন এবং কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। বদরের যুদ্ধ শুরুর আগে আল্লাহর নবি দোয়া করেছিলেন-‘হে আল্লাহ! তুমি যদি চাও দুনিয়াতে তোমার ইবাদত করার কেউ না থাকুক, তাহলে এ ক্ষুদ্র দলটিকে নিশ্চিহ্ন হতে দাও।’ আল্লাহ তায়ালা রাসূল (সা.)-এর দোয়া কবুল করেন। তখনই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আল-কুরআনের আয়াত নাজিল করে বলেন, ‘তাদের সাথে যুদ্ধ করো, যারা তোমার সাথে যুদ্ধ করে। তবে সীমা অতিক্রম করো না। কারণ সীমালঙ্ঘনকারীদের আল্লাহ পছন্দ করেন না।’ (সূরা-বাকারাহ : ১৯০)

তারপর রাসূলুল্লাহ সা: যুদ্ধসংক্রান্ত মন্ত্রণাসভার পরামর্শক্রমে ৩১৩ জন মতান্তরে ৩২৪ জনের একটি ক্ষুদ্র বাহিনী নিয়ে মদিনার প্রায় ৮০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে বদর উপত্যকায় আল-আরিশ পাহাড়ের পাদদেশে শিবির স্থাপন করেন। ফলে মুসলিমদের অনুকূলে পানির কূপগুলো চলে আসে এবং সূর্যকিরণ চোখে পড়ত না। দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজানে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ১৭, ১৯ ও ২১ রমজান এ তিন দিন যুদ্ধের পর কুরাইশ বাহিনী পরাজিত হয়ে পলায়ন করে। এ যুদ্ধে কুরাইশদের নেতা আবু জেহেলসহ ৭০ জন নিহত হয় এবং ৭০ জন বন্দী হয়। পক্ষান্তরে ১৪ জন মুসলিম শাহাদতবরণ করেন। মানুষকে বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে জয়ী করে দেখিয়ে দিলেন অবিশ্বাসী লোকদের প্রকৃত দুর্বলতা ও অসহায়তা। তাই বদরের যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ যুদ্ধ।

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

১৭ রমজান: ঐতিহাসিক বদর দিবস আজ

আপডেট সময় : ০১:৪২:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

আজ ১৭ রমজান। ইসলামের ইতিহাসে ১৭ রমজানের গুরুত্ব রয়েছে। ঐতিহাসিক বদর দিবস আজ। আজকের দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে হিজরির দ্বিতীয় সনের ১৭ রমজান মদিনা থেকে প্রায় ৭০ মাইল দূরে বদর প্রান্তরে সংঘটিত হয় মুসলমানদের এবং কুরাইশদের মধ্যে  এক ঐতিহাসিক যুদ্ধ যা ইতিহাসে বদরযুদ্ধ নামে পরিচিত। ইতিহাসে তা ‘গাজয়ানে’ বদর নামেও পরিচিত। বদরের যুদ্ধ ছিল কুরাইশ এবং মুসমানদের প্রথম সামরিক যুদ্ধ।  বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত প্রিয় নবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর নিয়ে আসা ধর্ম ইসলামের রক্ষায়  ইসলামের বিরুদ্ধবাদী বিশাল সৈন্য-সামন্তের মোকাবিলায় ইমানদার বান্দাদের ছোট একটি দল বদরের প্রান্তরে যুদ্ধ করেছিল।

এ যুদ্ধের ফলে ইসলামের ইতিহাসে যুগান্তকারী পরিবর্তন হয়। পবিত্র কুরআনে সূরা আনফালে আল্লাহ তায়ালা বলেন:” স্মরণ করো যখন আল্লাহ তোমাকে স্বপ্নে দেখিয়েছিলেন তারা সংখ্যায় ছিল অল্প। যদি তিনি  তাদের সংখ্যায় বেশি দেখাতেন তাহলে তোমরা সাহস হারাতে এবং যুদ্ধের জন্য নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি করতে। কিন্ত আল্লাহ রক্ষা করেছেন।নিশ্চয় তিনি অন্তরের খবর জানেন।”( সূরা আনফাল: ৪৩)

মুসলমানরা বিশ্বাস করেন, জয়-পরাজয় আল্লাহর হাতে। সম্মান ও অপমান আল্লাহর হাতে। তাই তারা সেদিন আবু জেহেলের বিশাল প্রশিক্ষিত এবং সুসজ্জিত বাহিনির সামনে নিরস্র অল্প সংখ্যক ইমানদার মুসলমান সৈন্য নিয়ে আল্লাহর নবি কাফেরদের মুখোমুখি হন।এ যুদ্ধে মানুষের ধারণাপ্রসূত সব ধরনের চিন্তা ও উপলব্ধির বাইরে গিয়ে আল্লাহ তায়ালা অস্ত্রশস্ত্রহীন ইমানদারের অতিক্ষুদ্র দলটিকে বিজয় দান করেন। এ বিশ্বাস ও চেতনা লালন করে পৃথিবীর যে প্রান্তে যখনই মুসলমানরা অসত্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, তারা সংখ্যায় বা উপকরণে কম হলেও আল্লাহ তাদের বিজয় দান করেছেন।

ইসলামের রক্ষায় অল্প সংখ্যক সম্পদ নিয়ে যারা এগিয়ে গিয়েছিল তাদের জয় নিশ্চিত হয়েছে। পক্ষান্তরে আল্লাহর উপর ভরসাহীন ভাবে অঢেল সম্পদ নিয়ে পরাজয়ের বর্ণনা ইতিহাসে ভরপুর হয়ে আছে।

রাসূলুল্লাহ সা: ৬২২ খ্রি: আল্লাহর নির্দেশে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। মদিনায় হিজরতের ফলে রাসূলুল্লাহ সা:, ইসলাম ও মুসলমানদের জীবনে এক নব অধ্যায়ের সূচনা হয়। মদিনাবাসী রাসূল্ল্লুাহ সা: ও ইসলামের সুমহান শান্তির বাণীকে সাদরে গ্রহণ করে। ইসলাম প্রচার ও প্রসার চার দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। মাত্র দ্ইু বছরে রাসূলুল্লাহ সা: কলহপ্রিয় মাদিনাবাসীদের একটি সভ্য জাতিতে পরিণত করতে সক্ষম হন। মদিনায় শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মদিনা সনদ প্রণয়ন করা হয়। এতে করে মদিনায় বসবাসরত পৌত্তলিক, ইহুদি, খ্রিষ্টানের মধ্যে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ও মদিনা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সুসংহত হয়। রাসূল্ল্লুাহ সা: মদিনায় আগমনের পর থেকে ইসলামের প্রচারও বাড়তে থাকে। ইসলামের অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতিতে কুরাইশরা ঈর্ষান্বিত ও নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় চিন্তিত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় মদিনা থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করতে ব্যস্ত হয়ে যায়।

ইসলামের ঘোর শক্র আবু সুফিয়ানের মিথ্যা প্রচার বদরের যুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন। আবু সুফিয়ানের মিথ্যা প্রচারণার ফলে আবু জাহেলের নেতৃত্বে ৭০০ উষ্ট্রারোহী, ১০০ অশ্বারোহী ও ২০০ পদাতিক সৈন্যসহ প্রায় ১০০০ সৈন্য নিয়ে মদিনার অভিমুখে যাত্রা করা হয়। এ সংবাদ শুনে শান্তপ্রিয় নবী সা: চিন্তিত হয়ে পড়লেন এবং কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। বদরের যুদ্ধ শুরুর আগে আল্লাহর নবি দোয়া করেছিলেন-‘হে আল্লাহ! তুমি যদি চাও দুনিয়াতে তোমার ইবাদত করার কেউ না থাকুক, তাহলে এ ক্ষুদ্র দলটিকে নিশ্চিহ্ন হতে দাও।’ আল্লাহ তায়ালা রাসূল (সা.)-এর দোয়া কবুল করেন। তখনই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আল-কুরআনের আয়াত নাজিল করে বলেন, ‘তাদের সাথে যুদ্ধ করো, যারা তোমার সাথে যুদ্ধ করে। তবে সীমা অতিক্রম করো না। কারণ সীমালঙ্ঘনকারীদের আল্লাহ পছন্দ করেন না।’ (সূরা-বাকারাহ : ১৯০)

তারপর রাসূলুল্লাহ সা: যুদ্ধসংক্রান্ত মন্ত্রণাসভার পরামর্শক্রমে ৩১৩ জন মতান্তরে ৩২৪ জনের একটি ক্ষুদ্র বাহিনী নিয়ে মদিনার প্রায় ৮০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে বদর উপত্যকায় আল-আরিশ পাহাড়ের পাদদেশে শিবির স্থাপন করেন। ফলে মুসলিমদের অনুকূলে পানির কূপগুলো চলে আসে এবং সূর্যকিরণ চোখে পড়ত না। দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজানে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ১৭, ১৯ ও ২১ রমজান এ তিন দিন যুদ্ধের পর কুরাইশ বাহিনী পরাজিত হয়ে পলায়ন করে। এ যুদ্ধে কুরাইশদের নেতা আবু জেহেলসহ ৭০ জন নিহত হয় এবং ৭০ জন বন্দী হয়। পক্ষান্তরে ১৪ জন মুসলিম শাহাদতবরণ করেন। মানুষকে বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে জয়ী করে দেখিয়ে দিলেন অবিশ্বাসী লোকদের প্রকৃত দুর্বলতা ও অসহায়তা। তাই বদরের যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ যুদ্ধ।